‘অভাবের তাড়নায়’ ক্ষুধার্ত শিশুকে হত্যা করল বাবা!

ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছিল শিশুটি। কিন্তু ঘরে থাকা খাবার আগেই শেষ, পকেটেও নেই টাকা। এমন অবস্থায় মাথা ঠিক রাখতে পারেননি দেনায় ডুবে থাকা বাবা। দুই বছরের মেয়েকে শক্ত করে বুকে জড়িয়েই ঝাঁপ দিয়েছিলেন লেকে। পরদিন মরদেহ মেলে শিশুর। সম্প্রতি মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে।

ছবি: এনডিটিভি

গত ১৫ নভেম্বর বাবা-মেয়ে একসঙ্গে নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশ ধরে নিয়েছিল, দেউলিয়া বাবাও হয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু তার মরদেহ মিলছিল না। কয়েক দিন তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর অবশেষে খোঁজ মিলেছে রাহুল পারমার নামে বছর ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তির, যিনি পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার।

রোববার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানায়, সন্তানকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত রাহুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, মেয়েকে হত্যার পর অভাব আর দেনার হাত থেকে রেহাই পেতে তিনিও আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ‘ব্যর্থ’ হন। রেললাইনে ঝাঁপ দিতে চেয়েও পারেননি। পাওনাদার আর পুলিশের ভয়ে তাই এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

পুলিশের সন্দেহ, মেয়েকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করেই হত্যা করেছে রাহুল। এ ছাড়া সে সত্যিই অভাবের তাড়নায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

জানা গেছে, রাহুল পারমার গুজরাটের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে সপরিবার বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। কাজ করতেন একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। কিন্তু সম্প্রতি চাকরি হারান তিনি। বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনেছেন। ফলে প্রচুর ধারদেনা করতে হয় তাকে। পাওনাদারদের ঠেকাতে স্ত্রীর গহনাও বিক্রি করেছেন। কিন্তু তাতেও সংকট না কাটায় দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন রাহুল।

কিন্তু দুই বছরের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন? সেই জট খোলার চেষ্টা করছে পুলিশ। ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারেন এমন প্রোফাইলের কেউ কীভাবে এতটা ঋণগ্রস্ত হলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রাহুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চুরির মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে। ‍

প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর মেয়েকে প্লে-স্কুলে দিতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ার পরও স্বামী-মেয়ে বাসায় না ফেরায় থানায় একটি ডায়েরি করেন রাহুলের স্ত্রী ভব্যা। পরদিন বেঙ্গালুরু-কোলার হাইওয়ের পাশে একটি লেক থেকে রাহুল-ভব্যা দম্পতির মেয়ে জিয়ার মরদেহ উদ্ধার হয়।

পুলিশকে রাহুল জানিয়েছেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ১৫ নভেম্বর মেয়েকে নিয়ে বেঙ্গালুরুর আশপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করেন তিনি। কীভাবে আত্মহত্যা করবেন তা স্থির করতে পারছিলেন না, বিশেষ করে তার মেয়ের সামনে।

রাহুলের দাবি, একটা সময় পরিকল্পনা বাতিল করে বাড়ি ফেরার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু পাওনাদারদের গালি আর হেনস্তার কথা মনে করে ফের বিভ্রান্ত হয়ে লেকের পাশে গাড়ি দাঁড় করান রাহুল। তখন মেয়েকে ক্ষুধায় কাঁদতে দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে, তাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরেই লেকের পানিতে ঝাঁপ দেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*