চুরি হওয়া শিশু শনাক্তের ৮ বছর পার হলেও ফেরত পাননি মা

চুরি হওয়া শিশু শনাক্ত হওয়ার পর ফেরতও দিতে চান পালক বাবা-মা। কিন্তু ৮ বছরেও সন্তানকে কাছে পাননি ওই সন্তানের মা তাজমিন আক্তার। উল্টো ডিএনএ পরীক্ষার নামে ১৭ দিন কারাগারে রাখা হয় সেই মাকে। শিশুটির মা এখনও ঘুরছেন আদালতের দ্বারে দ্বারে। যে ক্লিনিক থেকে নবজাতক (ছেলে) চুরি হয় তাদের হস্তক্ষেপকে দুষছেন তিনি। উপায় না দেখে আবার দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের।

চুরি হওয়া শিশু শনাক্তের ৮ বছর পার হলেও ফেরত পাননি মা

২০১৩ সালের জুলাই মাসের শেষে দিকের বগুড়ার আইভি ক্লিনিকে যমজ বাচ্চা প্রসব করেন তাজমিন আক্তার। ক্লিনিক থেকে বলা হয় তার ছেলে নবজাতক মারা গেছে। সুস্থ আছে মেয়ে নবজাতক। কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন মারা যায়নি শিশুটি বরং নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে তার সন্তানকে। এরপর সন্তানের জন্য শুরু হয় তাজমিনার আইনি লড়াই।

ডিএনএ পরীক্ষাতেও মেলে শিশুটি ভুক্তভোগী তাজমিনারই। অন্যদিকে মামলা এবং তদন্তে এসে ক্লিনিক থেকে নবজাতক কেনার কথা স্বীকার করেন নিঃসন্তান সেই দম্পতি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ৮ বছরেও সন্তানকে কাছে পাননি ভুক্তভোগী মা।

ভুক্তভোগী মা তাজমিন সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, ৮ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা এবং আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি সব জায়গাতে গিয়েছি, আমার শিশু সন্তানের শৈশব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তৃতীয়পক্ষ মানে ক্লিনিক পক্ষ ওই দম্পতিদের আমার সন্তান আমার কাছে ফিরে দিতে বারণ করছে, নিজেদের রক্ষা করার জন্য। ক্লিনিক পক্ষ ফাঁদে পড়বে জেনে, আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছে।

ভুক্তভোগী মা বলেন, আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি, আমার স্বামী একজন ভ্যানগাড়িচালক। এত টাকা কোথায় পাব। যারা আমার সন্তানকে ৫ হাজার টাকায় কিনে ছিল, তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আবার নার্সও স্বীকার করেছে যে তারা ৫ হাজার টাকায় শিশুসন্তান বিক্রি করেছে। তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে এ সন্তান আমার। ক্লিনিক পক্ষের কারণে দিনের পর দিন আমার সন্তান থেকে দূরে আছি। একের পর এক তারিখ আসছে, কিন্তু আমি আমার সন্তানকে ফিরে পাচ্ছি না।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আইনি এ লড়াইয়ে নেমে বিনা দোষে ১৭ দিন জেল খাটতে হয় তাজমিনাকে। ডিএনএ পরীক্ষার নামে তাকে রাখা হয় দুই কারাগারের দাগী আসামিদের সঙ্গে।

এ বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মা বলেন, আমি জানতাম না ডিএনএ টেস্টের জন্য কারাগারে থাকতে হয়, তবুও ছিলাম, কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় সেখানে ১১দিন এরপর বগুড়া কারাগারে থাকতে হয়েছে। পরে জামিন নিয়ে বের হতে হয়েছে।

বিচারিক আদালতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত ভুক্তভোগী তাজমিন আক্তার সন্তানকে ফিরে পেতে এক বুক আশা নিয়ে এবার দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*