কুমিল্লার চান্দিনা এবং দেবিদ্বার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের ৪ ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবৈধ লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই আহ্বায়ক কমিটির ৪ জন পদত্যাগ করেছে।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে দেবিদ্বার পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন কিশোর গ্যাং সদস্য ফরহাদ হোসেন হিমেল (২২)। যিনি সন্ত্রাসী হামলার মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। অছাত্র, বিবাহিত, কিশোর গ্যাং সদস্য, সন্ত্রাসী মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাজা ভোগ করা আসামি, নিষ্ক্রিয়, অচেনা ও যোগ্যতা অনুসারে সিনিয়র-জুনিয়র বিবেচনা না করে কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুই উপজেলার ৪টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, দেবিদ্বার পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পাওয়া ফরহাদ হোসেন হিমেল কিশোর গ্যাং বদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ছোট আলমপুর এলাকার লিমন নামে এক কিশোরকে রড, রাম দা ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত ও ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করেছে। পরে ১০ এপ্রিল ভোরে পৌর এলাকার বানিয়াপাড়া এলাকা থেকে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কিছুদিন পর সে জামিনে বের হয়ে আসে। হিমেল বানিয়াপাড়া এলাকার মীর হোসেনের ছেলে। সক্রিয় কিশোর গ্যাং সদস্যকে ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান দেয়ায় শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
এদিকে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর রাতেই পদত্যাগ করেছেন চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের ৩নং যুগ্মআহ্বায়ক রাজীব দত্ত ও যুগ্মআহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ তপু এবং পৌরছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল রিফাত ও চান্দিনা উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম।
রাজীব দত্ত তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন হয়েছে। একটা নীরব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেখানে আমাকে ৩নং যুগ্মআহ্বায়ক করা হয়েছে। যা দেখে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি। তারা আমার যোগ্যতা এভাবে বিচার করবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি। তেলবাজি, চামচামি না করলে রাজনীতি হয় না, তা আমি বিশ্বাস করতাম না, আজ তার প্রমাণ পেলাম। যেখানে উপযুক্ত মূল্যায়ন নেই, সেখানে থাকারও কোন মানে হয় না। আমি উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। এ কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
তোফায়েল আহমেদ তপু তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করলাম। এখনও যদি পরিবার ও স্বজনপ্রীতির রাজনীতি থেকে যায় তাহলে! অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি মহোদয় এসব দিক যদি ঠিকভাবে তদারকি না করে তাহলে ভবিষ্যতে চান্দিনার রাজনীতি কোথায় দাঁড়াবে।’
জাহিদুল ইসলাম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘যোগ্যতা যখন টাকায়,পরিশ্রম ও ত্যাগ সেখানে বৃথা চেষ্টা। আমি জাহিদুল ইসলাম, চান্দিনা উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’
রাজীব দত্ত বলেন, ‘আমি ২০১০ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। আমাকে করা হয়েছে ৩নং যুগ্মআহ্বায়ক। ২নং যুগ্মআহ্বায়ক করা হয়েছে ছাইফুল্লাহ মানছুরকে, যাকে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই। জেলার সভাপতি কমিটিতে পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে জুনিয়রদের নিচে আমাকে রেখেছেন। এ কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা সব সময় মাঠে থাকে তারা এ কমিটিতে অবমূল্যায়িত।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা লিটন সরকার জানান, এ চার ইউনিটে কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশিরভাগ ছেলেকে আগে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দেখা যায় নি। যোগ্যতার চেয়ে যখন টাকা বড় হয়ে যায়, তখন আর কী বলার আছে। অযোগ্য, অছাত্র ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে, যা দলের জন্য অশনি সংকেত।
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেল জানান, যারা ত্যাগী, তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। একেকটি পদের জন্য ২০-২৫ জন প্রার্থী থাকে। যারা পদ পায় না, তারা সমালোচনা করে। সবাইকে তো পদ দেয়া যায় না। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কমিটিতে স্থান পাওয়া কারোর বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তাদের বাদ দেয়া হবে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। আমাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
দেবিদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে আসাদুর রহমান রনিকে, পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে নুর মোহাম্মদ রনিকে। চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে মাহফুজুর রহমান টিপুকে এবং পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ইমদাদুল ইসলাম জয়কে। আহ্বায়ক কমিটিগুলো ৩ মাসের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে।
Leave a Reply