নিজ হাতে খেতে পারছেন না ১০ হাজার শ্রমিক!

পরিবারের জন্য দিনভর কঠোর পরিশ্রমী প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের হাতে ফোসকা পড়েছে। নিজ হাতে খাবার খেতে পারছেন না এ শ্রমিকরা। জীবনযুদ্ধে দৈনন্দিন উপার্জন শেষে বাড়ি ফিরে হাতের পরিবর্তে তাদের স্টিলের চামচ দিয়ে খাবার খেতে হচ্ছে।

নিজ হাতে খেতে পারছেন না ১০ হাজার শ্রমিক!

এমনটাই দেখা গেল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সীমান্ত ঘেঁষা মহানন্দা নদীর পাড় এলাকায়।


সরেজমিনে দেখা যায়, ওপারে ভারত এপারে বাংলাদেশ; দু’দেশকে ভাগ করেছে মহানন্দার স্রোতের পানি। মহানন্দা নদীর এলাকাগুলোতে পানকৌরীর মতো ডুব দেয়া প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে কঠোর পরিশ্রমী প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের হাতে ফোসকা পড়েছে। যেই হাতে দিনভর উপার্জন, সেই হাত দিয়ে দুমুঠো ভাতও মুখে দিতে পারেন না শ্রমিকরা। জীবন-জীবিকার যুদ্ধে সীমিত কিছু অর্থের জন্য বছরের বেশি সময় নুড়ি পাথর সংগ্রহে মহানন্দার বরফ গলা পানিতে সময় অতিবাহিত হয়ে আসছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কঠোর প্ররিশ্রম করে একজন শ্রমিকের মজুরি হিসেবে পান ৪ থেকে ৫০০ টাকা।

তেঁতুলিয়া সর্দারপাড়া এলাকার শ্রমিক রুস্তম আলী সময় সংবাদকে বলেন, আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানন্দার পানিতে ডুবে হাত দিয়ে কুড়িয়ে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করি। এতে আমাদের দীর্ঘ সময় পানিতে থাকতে হয়। যার ফলে পরে হাতে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে নিজ হাতে আর ভাত খেতে পারছি না।
মহানন্দা নদীতে নুড়ি পাথর সংগ্রহে যাওয়া শালবাহান পরামাণিকপাড়া এলাকার পাথর শ্রমিক জাহেদুল ও হাবিব সময় সংবাদকে বলেন, একসময় আমাদের রোজগারের অন্য মাধ্যম ছিল। কর্মহীন হয়ে পড়ায় আমরা তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতে পাথর শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়েছি। এখানে হাত দিয়ে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে মোটামুটি একটা রোজগার হয়, যা দিয়ে পরিবারের চাহিদা ভালোভাবে পূর্ণ করতে পারছি। কিন্তু এখন আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতের ফোসকা। ডাক্তার বলেছে এই সমস্যা থেকে ভালো হতে রেস্ট দরকার। কিন্তু একদিন বাড়িতে বসে খাওয়ার অবস্থা আমাদের নেই।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন রফিকুল হাসান সময় সংবাদকে বলেন, মহানন্দা নদীতে অনেক মানুষ হাত দিয়ে পাথর তোলেন। আমাদের কাছে আসা বিভিন্ন সময়ের রোগীদের হাতে দেখেছি এমন ক্ষত। তারা আমাদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় নদীর পানিতে থাকায় তাদের হাতে এই সমস্যা হচ্ছে। আর এই সমস্যা হলে তারা লবণ বা খাবার ঠিকভাবে হাতে নিতে পারেন না। আর এটি থেকে সুস্থ হতে গেলে তাদের শারীরিক রেস্টের প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, তাদের পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত কাজ না করে একটা বিরতি নিয়ে কাজ করার। কারণ বিরতি নিলে এই সমস্যাটা একটু কম হবে। এ ছাড়া কিছুক্ষণ কাজ করে হাত শুকিয়ে নিয়ে আবার পুনরায় কাজ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না। আরেকটি উপায় রয়েছে যদি শ্রমিকরা হাতে গ্লোভস পরে নদীতে পাথর সংগ্রহের কাজ করে তাহলেও এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা সময় সংবাদকে বলেন, বিষয়টি তেমনভাবে আমাদের নজরে ছিল না। আপনার মাধ্যমে অবহিত হয়েছি। তবে যাদের হাতের দুরবস্থা এবং কাজ না করলে বাড়িতে খাদ্য জোগানের কোনো বিকল্প নেই, শুধু তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*