বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের ওপর বিটিএসের প্রভাব

বিটিএস, বিশ্বজুড়ে উন্মাদনার আরেক নাম। তাদের গাওয়া গানগুলোই যে শুধু কে-পপের প্রতিনিধিত্ব করছে তা নয়, দিনে দিনে তারা পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডে।

বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের ওপর বিটিএসের প্রভাব

কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ করেই ইতিমধ্যে মিউজিক বিষয়ক সব ধরনের রেকর্ড ভেঙেছে তারা। ২০২০ সালজুড়ে আকস্মিক কিছু লাইভ অনুষ্ঠানের পর পপ সংগীত জগতের জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছেছে বিটিএস। যেখানে অন্য তারকারা নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে ‘দ্য আর্মি’ নামে পরিচিত বিটিএসের আন্তর্জাতিক ভক্তরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে দারুণভাবে। বিটিএস এখন একটি মাল্টিবিলিয়ন-ডলারের ব্যবসা।

 

কোরিয়ান পপ সংগীত বা কে-পপের ঐতিহ্য অনুসরণ করে বিটিএস তাদের যাত্রা শুরু করে। আকর্ষণীয় পোশাক, মন মাতানো নাচ আর চকচকে ভিডিওতে ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু এটাই শেষ নয় চাকচিক্য তারকা জীবনের পাশাপাশি ভক্তদের সামনে তারা তাদের কঠিন পরিশ্রমের গল্পগুলোও ভাগ করেছে। এছাড়া ভক্তদের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখতে হয় এবং মিউজিককে কীভাবে গ্রহণ করতে হয় তা তাদের ভালো জানা বিটিএসের। যে কারণে বিটিএস- আর তাদের ভক্তদের একটা গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভক্তরা মনে করেন বিটিএস-এর গানগুলো যে কোনো ধরনের প্লে লিস্টের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে যায়।

বিটিএসের সহকর্মীদের থেকে তাদের শিল্পচর্চার ধরন ভিন্ন। সমাজে যে প্রচলিত ধারণাগুলো আছে, তার বিপরীতে অবস্থান নেয় বিটিএস। এসব চিন্তা-ভাবনা উঠে আসে তাদের কথায়, কাজে, গানে ও সুরে। কে-পপ মিউজিক জগতে বিটিএস আসার আগে এ ধারণা ছিল বিরল। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। ব্যান্ড দলটিকে ভালোবেসে বিটিএস ভক্তরা ৭.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ারে তাদের অ্যালবামগুলো কিনে নেয় যা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ প্রতিবাদে বিটিএসের দশ লাখ ডলার অনুদানের সঙ্গে যোগ হয়। সংগীত জগতের ইতিহাসে বিটিএস মানব সম্পর্কের জন্য একটি শিক্ষণীয় অংশ বলা হয়ে থাকে।

২০১৩ সালে প্রকাশিত তাদের প্রথম গান ‘নো মোর ড্রিম’ এ তারা কোরিয়ার সামাজিক কিছু প্রচলনের সমালোচনা করে। যেমন, স্কুলপড়ুয়া শিশুদের কাছ থেকে অভিভাবকদের উচ্চাশা। তারা খোলাখোলিভাবে নিজেদের মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেছে সবার সামনে। এটাও জানিয়েছে, তারা এলজিবিটিকিউ অধিকারের পক্ষে। ভক্তদের সামনে নিজেদের প্রকাশ করার সময়েও তাদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সমাজে পুরুষত্বের যে চিহ্নগুলো প্রচলিত, তা থেকে বেরিয়ে আসে বিটিএসের প্রতিটি সদস্য। চুলে পোলাপী বা নীল রঙে মানা নেই তাদের, একে অপরকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে যে সহজাত আনন্দ, তাও ফুটে ওঠে তাদের চেহারায়। এ সব কিছুই তাদের আলাদা করে রেখেছে, শুধু কে-পপ জগতেই নয়, বরং সারা বিশ্বে।

এদিকে প্রথমবারের মতো ডায়নামাইট  শিরোনামে ইংরেজি ভাষায় গান প্রকাশ করে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের গানের তালিকার শীর্ষে অবস্থান নেয়। বিটিএস একমাত্র ব্যান্ড যারা একই সময়ে বিলবোর্ডের সেরা গান ও সেরা অ্যালবামের তালিকার শীর্ষে ছিল। বিটিএসের ভক্তরা শুধু যে তাদেরকে প্রথম অবস্থানে নিয়ে গেছে তা নয়, বরং, তাদের ইতিবাচক বার্তা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। আর দশটা ব্যান্ডের মত কাজ না করে সমাজের ওই সমস্ত জিনিসগুলো তুলে ধরেছে যেগুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না। যেমন mental health (মেন্টাল হেলথ), bulling (বুল্লিং), self love(সেলফ লাভ) আর এ সমস্ত কারণে তরুণ সমাজে খুবই সাড়া পেয়েছে দলটি। বিটিএসকে বলা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে তরুণদের সক্রিয়তার প্রতীক।

এত এত সাফল্যই শেষ কথা নয় আছে সমালোচনাও। ব্যান্ড দলটি পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসারী হওয়ায় তাদের গানে সে সংস্কৃতির দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, সেটি বাঙালিদের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও কারও কারও অভিমত কারণ সাধারণত বাঙালিরা হুজুগে বিশ্বাসী বলে একটা কথা রয়েছে। যেহেতু বিটিএস জনপ্রিয় হলেও অধিকাংশ মানুষই তাদের ভাষা বুঝতে পারে না। কিন্তু বুঝে হোক বা না বুঝে ঝোঁক একটা রয়েছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। নাচ গান সব ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করতে গিয়ে ঐতিহ্যমণ্ডিত বাঙালির সংস্কৃতির স্টাইলই নষ্ট হতে পারে বলে শঙ্কাও রয়েছে । বিটিএসর গান গুলোর কথা যেহেতু মানুষকে বার্তা দিচ্ছে সেটা বুঝক বা না বুঝুক বাকি সটাইল ফলো করতে ব্যস্ত এক দল তরুণ। তরুণ প্রজন্ম যখন তাদের অনুসরণ করছে, তখন থেকেই পোশাক-আশাকে তাদের নীতিমালা মেনে চলছে। যে বিষয়গুলোই বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয় বলে মনে করেন অনেকে।  বিটিএস তাদের সংস্কৃতি অনুসরণ করে তাদের জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে তাই দেশের তরুণ প্রজন্মকেও নিজেদের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিকে ধরে রাখা উচিত বলে মনে করেন বোদ্ধারা। অন্যথায় হারিয়ে ফেলতে হবে বাঙালি গান, সুর, ইতিহাস ও ঐতিহ্য।  

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*