বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা কে এই ক্লোসা?

ফুটবলের কিংবদন্তি স্ট্রাইকারের তালিকায় হয়ত শুরুর দিকে নাম থাকবে না মিরোস্লাভ ক্লোসার। ক্লাব ক্যারিয়ারটা খুব বেশি আহামরি নয় তার। জেতেননি ক্লাবের হয়ে খুব বেশি শিরোপা, কিংবা নামের পাশে নেই ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার ব্যালন ডি’ অর। তারপরও অনন্য এই জার্মান ফুটবলার। বিশ্বকাপে যে তার চেয়ে বেশি গোল করতে পারেনি আর কেউই।

ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডে জন্ম হলেও ফুটবলের ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছেন জার্মানিকে। তবে নিজেকে দেশের গণ্ডিতে না বেঁধে পরিচয় দেন ইউরোপিয়ান বলে। মনেপ্রাণে খেলতেনও ইউরোপের ফুটবলই।

১৯৯৮-৯৯ সালে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা ক্লোসা নজর কাড়েন কাইজারস্লাটার্নে। ক্লাবের হয়ে ২০০১-০২ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ১৬ গোল করে জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নাড়েন তিনি।

২০০১ সালে তাকে জাতীয় দলে ডাকেন কোচ রুডি ভোলার। আলবেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেকের মাত্র ২ মিনিটের মাথায় গোলের খাতা খোলেন তিনি। গোলের পর শূন্যে ভেসে ডিগবাজি খেয়ে চমৎকারভাবে গোল উদযাপন করেন তিনি। পরবর্তীকালে এই উদযাপন ক্যারিয়ারজুড়ে তার ট্রেডমার্কে পরিণত হয়।

গ্রিসের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে ৩৩ মিনিটে দুই গোল করে জার্মানিকে জয় এনে দিয়ে ও ইজরায়েল ও অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে দুটি হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাকা করেন তিনি।

২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে ২৪ বছর বয়সী ক্লোসা নজর কাড়েন। বিশ্বকাপে ৫ গোল করে রিভালদোর সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। মজার বিষয়, এই বিশ্বকাপে তার ৫ গোলের প্রতিটিই ছিল হেড থেকে করা। এই গোলগুলোর মধ্যে দুটি তিনি তার ট্রেডমার্ক ফ্রন্ট ফ্লিপে উদযাপন করেন, যা তাকে সালতো-ক্লোসা নামে খ্যাতি এনে দেয়। ৫ গোলের মধ্যে ছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিক। বাকি দুই গোল ছিল আয়ারল্যান্ড ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে।

২০০৬ বিশ্বকাপে আরও ৫ গোল করেন ক্লোসা। এবার অবশ্য সিলভার বুট নয়, বরং সর্বোচ্চ গোলের জন্য গোল্ডেন বুটই লাভ করেন। জার্মানির মাটিতে এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ৪-২ গোলে জয় পায় জার্মানি। এ ম্যাচে জোড়া গোল করেন তিনি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ফের জোড়া গোল করেন তিনি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বে যায় জার্মানি। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেডে সমতাসূচক গোলটিও করেন তিনি। পরে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে জার্মানি।

২০১০ বিশ্বকাপে আরও ৪ গোল করে স্বদেশি জার্ড মুলারের পাশে বসেন ক্লোসা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল করেই স্বদেশি ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের পাশে বসেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও খেলা হয়নি তার। শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে। সেইসঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে ৯৯ ম্যাচে পূর্ণ করেন ৫০তম গোল। জার্মানি ম্যাচটি ৪-১ গোলের ব্যবধানে জেতে।

কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেন তিনি। ৪-০ গোলে জয় পায় জার্মানি। ক্লোসা ছুঁয়ে ফেলেন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা স্বদেশি কিংবদন্তি জার্ড মুলারকে।

২০১৪ বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে ব্রাজিলে যান ক্লোসা। আগের তিন বিশ্বকাপে ১৪ গোল করা ক্লোসার সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোকে ছুঁতে দরকার ছিল মোটে এক গোল। ঘানার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করা ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি করে রোনালদোকে ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দেয়ার ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি করে ১৬ গোল নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন তিনি।

বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেন ক্লোসা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মারিও গোতজের অতিরিক্ত সময়ের গোলে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে জার্মানি। ১৩৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৭১ গোল নিয়ে জার্মানির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে অবসর নেন পোল্যান্ডে জন্ম নেয়া এই ইউরোপিয়ান লিজেন্ড।

এক নজরে মিরোস্লাভ ক্লোসা: 

পুরো নাম: মিরোস্লাভ জোসেফ ক্লোসা
জন্ম: ০৯ জুন ১৯৭৮, ওপোল, পোল্যান্ড
পজিশন: স্ট্রাইকার
জাতীয় দল: জার্মানি (১৩৭ ম্যাচে ৭১ গোল)
বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স: ১৬ গোল (সর্বোচ্চ)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*