ম্যাচ জয়ের ভিত্তিটা বল হাতে সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেন আগেই গড়ে দিয়েছিলেন। ব্যাটারদের কাজ ছিল দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়া।
লিটন-সাকিব ঠিকমতো কাজটা করলেও মিডলঅর্ডারের ব্যর্থতায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশের আশা। তবে শেষ উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গী করে একা লড়ে ভারত-বধ সম্ভব করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাই, সাকিব পাঁচ উইকেট পেলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেলেন মিরাজ। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে জানালেন, তার এই পারফরম্যান্স চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রোববার (৪ ডিসেম্বর) শেষ উইকেটে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৬ রানে নবম উইকেটের পতনের পর আরও একবার ভারতের বিপক্ষে হারের দুঃস্বপ্ন চেপে বসছিল টাইগারদের বুকে। তবে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫১ রানের পার্টনারশিপে দারুণ জয় ছিনিয়ে আনেন। ৩৯ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। ৪টি চারের সঙ্গে ২টি ছয়ও ছিল তার ইনিংসে।
ম্যাচ শেষে তাই সেরা খেলোয়াড় খুঁজে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়ে মিরাজই হয়েছেন ম্যাচসেরা। ৪টি চার ও ২টি ছয়ে সাজানো ৩৮ রানের অমূল্য ইনিংসটির পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ানের উইকেটটিও।
অবিশ্বাস্য জয়ের পর মিরাজ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সৃষ্টিকর্তাকে। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন এমন ইনিংস খেলতে পেরে তিনি রোমাঞ্চিত।
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে মিরাজ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা ও কৃতিত্ব মহান আল্লাহর। এটা আমার জন্য দারুণ সুযোগ ছিল। তাই আমি খুবই খুশি। ধন্যবাদ, আমি খুবই রোমাঞ্চিত।’
সেই সঙ্গে বলেন, তার এই ইনিংস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে,। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই খুব খুব খুশি। কারণ, ভারত অনেক বড় ও শক্তিশালী দল। তাই এই পারফরম্যান্স আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বল হাতেও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট মিরাজ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বোলিংও উপভোগ করেছি। কারণ, সকালে উইকেট বেশ ট্রিকি ছিল। আমি কেবল চেষ্টা করছিলাম উইকেট সোজা বল রেখে বোলিং করে যেতে।’
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা ভারতের ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল ১৮৬ রানে। বল হাতে এদিন নিজের সেরা সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে তুলে নিয়ে প্রথম ওভারেই শিকার করেন জোড়া উইকেট। ভারতের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ‘রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি’কে একই ওভারে ফেরান সাকিব। এই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত।
সাকিবের সঙ্গে তাণ্ডবে যোগ দেন পেসার এবাদত হোসেনও। একে একে শিকার করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও কেএল রাহুলকে। মোহাম্মদ শাহবাজ ও মোহাম্মদ সিরাজকেও ফেরান তিনি।
সাকিবও পরে ওয়াশিংটন সুন্দর, দীপক চাহার ও শার্দূল ঠাকুরকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট।
ব্যাট হাতে সহজ জয়ের পথে ছোটা বাংলাদেশ ধাক্কা খায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মুশফিকুর রহিমের মন্থর গতির ব্যাটিংয়ে। রানের চাপ যেমন বাড়িয়েছিলেন তেমনই পারেননি ম্যাচ শেষ করে আসতেও। ২৩ ওভারের পর থেকে ৩৩.৩ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে এই দুজন পারেননি একটা বাউন্ডারিও মারতে। ক্রিজে এসে চার মেরে খরা দূর করেন মুস্তাফিজ। এরপর গ্যাপ খুঁজে চড়াও হন মিরাজও। পয়েন্ট ও ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে হাঁকান ওভারবাউন্ডারি।
তখনও মনে হচ্ছিল তাদের ব্যাটে হয়তো পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমবে। কিন্তু ধারণা বদলে দেন মিরাজ। একটু একটু করে ব্যবধানটা কমিয়ে আনেন। ঝুঁকিও নিচ্ছিলেন না তেমন। অবশ্য এরই মধ্যে একবার ক্যাচ দিয়েছিলেন, যা ধরতে পারেননি রাহুল। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচটাই বের করে নিয়ে বাসেন মিরাজ। ৫১ রানের জুটিতে বাংলাদেশ প্রতিশোধ নেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের।
Leave a Reply