রাত পোহালেই ছাত্রলীগের সম্মেলন, সরগরম ছাত্র রাজনীতির মাঠ

দরজায় কড়া নাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। তাই সরগরম ছাত্র রাজনীতির মাঠ। সম্মেলন ঘিরে এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি।

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর)। সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস, ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কারা আসছে আগামীর নেতৃত্বে তারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে সবাই।

৩০ নভেম্বর (বুধবার) ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহ এবং জমা দেওয়া শুরু হয়। যা ৩ ডিসেম্বর (শনিবার) শেষ হয়েছে। এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন অর্ধশত প্রার্থী। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন পদপ্রত্যাশীরা।

করোনাকালে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মানবিক সহায়তা নিয়ে যারা মাঠে ছিলেন, তারা দলীয় মূল্যায়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব প্রতিরোধে সক্রিয় থাকা অনেকেই পদ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় সক্ষম নেতৃত্বের প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের। বিতর্কিতরা যেন কোনোভাবেই পদ না পায়, আগে থেকেই সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীদের।

তবে সম্মেলনের ঠিক শেষ মুহূর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ বিতরণের তোড়জোড় দেখা গেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের দেয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ। পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করছেন। তাদের অভিনন্দনও জানাতে দেখা যায় অনেককে।

তোড়জোড় করে কমিটিতে কেন পদ দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘মূল কমিটি ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন পদ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির নামে আমাদের আরও একটা কমিটি আছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বাইরে। সেই কমিটিতে কিছুসংখ্যক ছাত্র মূল্যায়িত হয়েছেন। তবে অনেকেই সংগঠনকে বিতর্কিত করার জন্য নিজের মতো এডিট করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারির এমন ঢালাও পদ বিতরণে আমরাও বিব্রত। এর আগেও ছাত্রলীগের শূন্য পদগুলোতে পোস্ট দেয়া হয়েছে, তবে এবারের মতো গণহারে আগে কখনও কোনো কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি।’

যদিও বর্ধিত কমিটিতে সদ্য পদ পাওয়া উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বিষয়টিকে সত্য বলেই দাবি করেন। তিনি সময় সংবাদকে জানান, যারা ছাত্রলীগকে ভালোবাসে এবং সংগঠনের জন্য পরিশ্রম করেছে, তাদের মূল্যয়নস্বরূপ এই পদ দেয়া হচ্ছে। এতে সবার মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি পাবে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘করোনাকালীন যখন একটা দুর্বিষহ সময় আমরা দেখেছি, সেই সময় ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে কাজ করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি হয়েছে। সেখানে অনেক যোগ্য কর্মী থেকে মাত্র দুই সদস্যের কমিটি হয়েছে। অনেকেই পদবঞ্চিত হয়। সেই পদবঞ্চিত কর্মীদের মূল্যায়ন হিসেবেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ্যতা অনুযায়ী মনোনীত করা হচ্ছে।’

বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগ বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় সংগঠন। তবে বিভিন্ন সময় নানারকম বিতর্কের জন্ম দিয়ে বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের মে মাসে হয়েছিল সংগঠনের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। দুই বছরের মেয়াদ শেষে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা গড়িয়েছে চার বছরে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*