‘শামীমাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের দ্বিচারিতা, যা মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন’

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তার সাজা কার্যকর করা হবে। শুধু এ কারণেই তাকে ফেরত দিচ্ছে না যুক্তরাজ্য। অথচ দেশটি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দেয়া শামীমা বেগমকে পাঠাতে চায় শুধু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে। এ বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, এটি যুক্তরাজ্যের দ্বিচারিতা, যা মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

‘শামীমাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের দ্বিচারিতা, যা মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন’

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। ফেরত পাঠাতে চায় তার পিতৃভূমি বাংলাদেশে। একে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান শামীমা। এ নিয়ে ২১ থেকে ২৫ নভেম্বর পাঁচ দিনের অভিবাসন শুনানি হয় দেশটির স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে।

রাষ্ট্রহীন শামীমাকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হবেন বলে অভিবাসন আপিল কমিশনকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান।

২০১৫ সালে শামীমা যখন পূর্ব লন্ডন ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যান, তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। তার দ্বিতীয় কোনো দেশের নাগরিকত্ব ছিল না। যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে এবং এর ফলে তিনি রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন।

এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, শামীমা তার বাবার দেশ বাংলাদেশে ফেরত যেতে পারেন। অথচ শামীমা কখনোই বাংলাদেশে আসেননি। এমনকি নেই বাংলাদেশি পাসপোর্টও।

এদিকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে আছেন বহাল তবিয়তে। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ব্যাপক অনীহা দেখা গেছে। কারণ, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে তার ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, এটি যুক্তরাজ্যের দ্বিচারিতা। নিজেদের স্বার্থরক্ষায় উন্নত দেশগুলোর দ্বিচারিতা নতুন কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, একাধিক দেশের সঙ্গে তারা (যুক্তরাজ্যের দ্বিচারিতা) এ ধরনের আচরণ করে এসেছে। তবে এটা সত্য যে, কোনো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো খুব শক্তিশালী হলে, ব্যবসার স্বার্থে তারা সেটা করে না। যখন দেখে যে একটু দুর্বল এবং সুযোগ নেয়া সম্ভব, সেই দেশের সঙ্গে বেশি দ্বিচারিতা ভাবটা দেখা যায় তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বৈদেশিক নীতি ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো বরাবরই নিজেদের পক্ষে যায় এমন নীতি অবলম্বন করে। ফলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে নাগরিকত্ব দেয়, অন্যদিকে রাষ্ট্রহীন বানায় শামীমাকে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিকভাবে একধরনের মানবাধিকার চলবে, অন্য দেশের বেলায় একধরনের মানবাধিকার চলবে, বাংলাদেশের বেলায় ভিন্ন রূপ মানবাধিকার হবে। মানবাধিকারের এত রূপ এবং নীতি যদি হয়ে যায়, তাহলে তো সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সাজার পাশাপাশি তরুণ-তরুণীদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া ঠেকাতে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর আরও কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*