রংপুরের পীরগঞ্জে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে সন্তান প্রসব করেছেন এক ছাত্রী। সন্তান প্রসবের দেড়ঘণ্টা পর ওই অবস্থাতেই পরীক্ষায় বসেন ওই ছাত্রী। বর্তমানে ওই ছাত্রীসহ নবজাতক সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ওই ছাত্রী।
সন্তান প্রসব করা ছাত্রীর নাম তাসলিমা খাতুন। তিনি উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর এলাকার ইসহাক আলীর মেয়ে।
তাসলিমার মামা এরশাদ আলী সময় সংবাদকে জানান, তিন বছর আগে তাসলিমার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থানার পঁচাবাজারের মাসুম আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পীরগঞ্জের মাদারগঞ্জ কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। স্বামী মাসুম আলী ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করায় বাবার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর মাদারগঞ্জ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয় পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজ। বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষা থাকায় সকাল থেকেই তাসলিমা প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরীক্ষার জন্য। কিন্তু হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা উঠলে ভ্যানে করে সরাসরি মিঠিপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানকার সেবিকা আমাদের জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাসলিমা সন্তান প্রসব করবে। পরে সেবিকাদের প্রচেষ্টায় সকাল পৌনে ১০টায় ছেলে সন্তান প্রসব করেন। তার কিছুক্ষণ পরেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজে নিয়ে যায়। যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে সিকবেডে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাসলিমা। অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে জানান তার মামা।
এরশাদ আলী বলেন, সন্তান প্রসবের পর আমরা পরিবারের লোকজন তাকে এবছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করি। কিন্তু তাসলিমার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করায় এক বছর শিক্ষাবর্ষ নষ্ট করতে চায় না। তাসলিমার মানসিক শক্তির কারণে প্রসব যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাসলিমা। পরীক্ষা শেষে নবজাতকসহ তাসলিমা বাড়িতে ফেরেন। বর্তমানে তারা দুজনেই সুস্থ আছে।
মাদারগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, তাসলিমার মামা সকালে দেখা করে সন্তান প্রসবের সংবাদ দেয় আমাকে। আমাকে অনুরোধ করেন যেন তাসলিমাকে সিকবেডে বসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়ার জন্য। পরে পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানালে কলেজের অধ্যক্ষ সিকবেডের ব্যবস্থা করে দেন।
পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রাশেদুন্নবী সময় সংবাদকে বলেন, মাদারগঞ্জ কলেজের এক ছাত্রী বাচ্চা প্রসবের পর ভ্যানযোগে নবজাতককে সঙ্গে এনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আমি তাকে বলেছিলাম ভ্যানে বসেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে কিন্তু ওই ছাত্রী মানসিকভাবে খুব শক্ত পরীক্ষার বলে বসে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা দিয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, তাসলিমা একজন সচেতন এবং পরিশ্রমী মানুষ। অপ্রতিরোধ্য এই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সফলতা এবং নবজাতকের সুস্থতা কামনা করছি।
Leave a Reply