৩২ বছর পর জমির মালিকানা দাবি করে স্কুল মাঠ দখল করায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুরুল কালীবাড়ী নিগমানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বন্ধ আছে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজও। এতে উদ্বিগ্ন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে এবং সরকারি করা হয় ২০১৩ সালে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ের নামে ৪৩ শতাংশ জমি দান করেছিলেন মৃত মনমোহিনী বর্মনী ও মোক্তার আলী।
জমিদাতা মোক্তার আলীর দান করা সাড়ে ২১ শতাংশ জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। মোক্তার আলীর ভাতিজা মমিনুর রহমান হঠাৎ ৩২ বছর পর ১১ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে তার লোকজনসহ গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট স্কুল মাঠে বেড়া দিয়ে কলাবাগান করেন ও একটি বাড়িও নির্মাণ করেন। স্কুল মাঠ দখল করায় বন্ধ আছে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজও।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা টিফিন সময়ে স্কুল মাঠের ছোট্ট জায়গায় খেলতে গেলে তাদের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করেন জমি দখলকারী পরিবারের লোকজন। এমনকি খেলাধুলার সময় বল কলাবাগানে গেলে বল কেটে ফেলাও হয়েছে। স্বাধীনভাবে স্কুল মাঠে খেলাধুলার চর্চা করতে না পারায় খুবই অস্বস্তিবোধ করছে শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে ক্লাসরুমেই বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল মাঠে স্বাধীনভাবে আর তারা খেলতে পারে না। তাই টিফিনের সময় ক্লাসেই বসে থাকে। কখনো আবার ক্লাস রুমেই খেলাধুলা করে।
স্কুল মাঠ দখলকারী মমিনুর রহমান বলেন, ‘এটি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। মাঠ দখলের আগে জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস, প্রধান শিক্ষক, চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তারা কেউই এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে যখন দেখলাম স্কুল মাঠের চার পাশে সীমানাপ্রাচীর দেয়া হচ্ছে, তখন আমি আমার জমি দখল করে কলাবাগান ও বসতবাড়ি তৈরি করি।’
সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রায় ৩২ বছর ধরে স্কুলের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে আসছে। হঠাৎ মাঠটি দখল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ক্লাসে মনোযোগীও হতে পারছে না।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিলুফা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে মাঠ দখলকারীর বিরুদ্ধে।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, স্কুলের জমি দখলের ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখছেন। আর আমাদের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে একটি মামলা করতে হবে। তাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মামলা করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।’
বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৫ জন আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৯ জন।
Leave a Reply