২০২৩ সালে প্রায় ৭০টি দেশে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ কোটি মানুষকে সাহায্য করার জন্য রেকর্ড ৫১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। খবর আল-জাজিরার।

জাতিসংঘ জানায়, যে পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন তা এই বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, ২০২২ সালের তুলনায় ৬৫ মিলিয়ন বেশি মানুষের জন্য সাহায্য প্রয়োজন। জাতিসংঘ এবং অংশীদার সংস্থাগুলো এটিকে ‘আশঙ্কাজনকভাবে উচ্চ’ বলে উল্লেখ করেছে।
জাতিসংঘের শীর্ষ জরুরি ত্রাণ কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, প্রয়োজনগুলো ‘আশঙ্কাজনকভাবে বেশি’। তিনি সতর্ক করে বলেন, খুব সম্ভবত এই বছরের জরুরি পরিস্থিতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
গ্রিফিথস বলেন, ‘প্রয়োজন বাড়ছে কারণ আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড এবং জলবায়ুর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি। কেননা, ২০২৩ সালেও এসব কারণে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এবং সে কারণেই আমরা আশা করি ২০২৩ সংহতির বছর হবে, ঠিক যেমন ২০২২ দুঃখের বছর ছিল।’
জেনেভায় গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান ওভারভিউ রিপোর্ট ২০২৩ প্রকাশ করার সময় গ্রিফিথস এই আবেদনটিকে প্রান্তে থাকা মানুষের জন্য একটি ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, পাকিস্তান থেকে আফ্রিকার হর্ন পর্যন্ত অসংখ্য দেশ প্রাণঘাতী খরা এবং বন্যার শিকার হয়েছে। উপরন্তু, ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের একটি অংশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। বিশ্বব্যাপী এখন ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। এই সবই বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের মধ্যে মহামারির প্রভাবে ধ্বংসযজ্ঞের শীর্ষে।’ যদি ২০২৩ সালে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ভয়াবহ হয়, তবে এটি অনেক বড় অংশে হবে। কারণ, ত্রাণের চাহিদা এরই মধ্যে অনেক বেশি।
গ্রিফিথস এক ব্যাখ্যায় বলেন, কমপক্ষে ২২২ মিলিয়ন মানুষ এই বছরের শেষ নাগাদ ৫৩টি দেশে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবে। দুর্ভিক্ষের হুমকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচটি দেশ এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেখানে আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, এর ফলে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এটি শিশুদের বাস্তচ্যুত, খাদ্য, নিরাপত্তাহীনতা, খাদ্যের অভাব, অনাহারের মতো সমস্যায় ফেলবে।
ইউক্রেন বিষয়ে জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেন, দেশটির ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ সহায়তা পেয়েছে এবং পরের বছর দেশ ও বিস্তৃত অঞ্চলের জন্য মোট ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি এবং দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলছে উল্লেখ করে গ্রিফিথস বলেন, উদ্বেগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রচণ্ড তাপ ক্যানসারের মতো অনেক মানুষের জীবন হানি করতে পারে।
জলবায়ু জরুরি অবস্থার সামনের সারিতে থাকা সম্প্রদায়গুলোকে জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ প্রধান বলেছিলেন, মানবতাবাদীদের আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনায় একটি বড় ভূমিকা পালন করা উচিত যাতে যাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন, তাদের জন্য স্থিতিস্থাপকতা তহবিল সুরক্ষিত থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ২০২৩ সালে মানবতাবাদী সম্প্রদায়কে অনেক বেশি সংগঠিত হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে জলবায়ু প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তাদের আরও স্বচ্ছ হতে হবে, অর্থ বিতরণ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আরও দ্রুত হতে হবে এবং যাদের জন্য এটির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তাদের সেই অর্থ পেতে হবে।’
Leave a Reply